Wednesday, September 28, 2016

জুতাজোড়া কেমন হবে



এ যুগের ফ্যাশনে হাই হিল জুতা আর বাস্তব প্রয়োজনে সেই যুগের ঘোড়সওয়ারির পরা উঁচু জুতার মধ্যে তফাত অনেক। ঘোড়সওয়ারির পা-জোড়া নিরাপদে রেকাবে রাখার জন্যই ছিল সেসব দিনের উঁচু জুতা। কালের বিবর্তনে সেই উঁচু জুতা এখন জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে।


কখনো রাস্তার ধুলা-ময়লা থেকে জুতার মূল অংশটিকে রক্ষা করার জন্য জুতায় উঁচু হিল ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো আবার যাঁদের উচ্চতা কম, তাঁদের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো বা শুধু ফ্যাশনের.............. জন্যই এটির কদর বেড়েছে। ফিরে আসি হাল ফ্যাশনে। ব্যক্তি ভেদে পছন্দের তালিকাটা এখন আরও সুনির্দিষ্ট। শারীরিক গঠন অনুযায়ী জুতা বাছাই করা উচিত। একই উচ্চতার দুই ব্যক্তির পায়ের গঠন ভেদে মানানসই জুতাটিও হতে পারে ভিন্ন। চলাফেরার সময় দুই পায়ের ওপর পুরো শরীরের ভর থাকে, তাই প্রত্যেকেরই সঠিক জুতা বাছাই করা প্রয়োজন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেলী রহমান জানালেন, অভ্যস্ত না হলে উঁচু জুতা (বিশেষ করে পেনসিল হিল) না পরাই ভালো। এ ছাড়া আঁকাবাঁকা, এবড়োখেবড়ো পথ কিংবা পিচ্ছিল স্থানে যাঁদের চলতে হয়, তাঁদের উঁচু জুতা পরা ঠিক নয়।

যাঁদের ওজন একটু বেশি, তাঁদের উঁচু জুতা বাছাই না করাই ভালো। কারণ হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে সহজেই পা মচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং উঁচু জুতা পরে হাঁটার ফলে কোমরে বা হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। উচ্চতা কমহলে এক থেকে দেড় ইঞ্চি উঁচু হিল পরা যায়, তবে লম্বা মানুষের জন্য এক সেন্টিমিটারের বেশি উঁচু জুতা বাছাই না করাই ভালো। জুতার পেছন দিকটা শুধু উঁচু না হয়ে যদি পুরো জুতা সমানভাবে উঁচু হয়, তা বেছে নেওয়াই ভালো। যেসব জুতার সামনের দিকটা সরু, সেগুলো পরলে আঙুলে চাপ লাগে। এমন জুতা পরা উচিত নয় বলে জানালেন অধ্যাপক সোহেলী রহমান।


উঁচু জুতার ইতিহাস কিন্তু পারস্য ইতিহাসের চেয়েও পুরোনো। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার দেয়ালচিত্রে মিলেছে উঁচু জুতার চিত্র, যা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। সাধারণ লোকদের তখন খালি পায়েই পথ চলতে হতো। গ্রিক সভ্যতার ইতিহাসেও উঁচু জুতা মানেই ছিল আভিজাত্য। অভিজাত অভিনয়শিল্পীরা নিজেদের আলাদা দেখানোর জন্য এ ধরনের জুতা ব্যবহার করতেন।
এখন অবশ্য ক্রেতার প্রয়োজন আর স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রেখেই জুতা তৈরি করা হয়। বাটার বিপণন বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আরফানুল হক জানালেন, আজকাল একই ধরনের জুতার উচ্চতাও আলাদা হয়ে থাকে। এ ছাড়া পায়ের পাতা চওড়া হলে চওড়া জুতা নেওয়ার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি সরু গঠনের পায়ের জন্য রয়েছে মানানসই জুতা।
ওজনের দিকটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে জানালেন আরফানুল হক। জুতা ভারী বা হালকা হতে পারে; নিজের ওজনের দিকটা খেয়াল রেখে কোন জুতা কতটা ভার নিতে পারবে কেনার সময়ই তা দেখে নেওয়া ভালো। কারও হয়তো উঁচু জুতা পরার অভ্যাস নেই, কিন্তু ইচ্ছে আছে ষোলো আনা। এ ক্ষেত্রে দিনের কিছুটা সময় উঁচু জুতা এবং বাকি সময়টা স্বাভাবিক উচ্চতার জুতা পরা ভালো। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে এলে দিনের বেশির ভাগ সময় উঁচু জুতা পরা যেতে পারে।
কথা হলো ডিজাইনার শাহিনা রাব্বি তপতীর সঙ্গে। আড়ংয়ের এক্সেসরিজ (লেদার অ্যান্ড জুয়েলারি) বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে রয়েছেন তিনি। জানালেন, যাঁদের উচ্চতা একটু কম, তাঁরা উঁচু জুতা পরতে চাইলে ওয়েজেস হিল বা প্ল্যাটফর্ম হিল বেছে নেওয়া যেতে পারেন। যেকোনো অনুষ্ঠানেই পরা যেতে পারে ওয়েজেস হিল।
পা একটু চওড়া হলে পাম শ‌ু পরা যায়। পায়ের সামনের খানিকটা অংশ খোলা থাকলে স্বস্তি পাবেন। এ ছাড়া পা চওড়া হলে বা পায়ে কোনো দাগ থাকলে পা ঢাকা থাকে এমন জুতা পরতে পারেন। গোড়ালি ফেটে গেলে গ্ল্যাডিয়েটর শ‌ু পরতে পারেন, এতে পায়ের পেছনের অংশটা ঢাকা থাকে। ক্যাপরি বা লেগিংসে স্বাচ্ছন্দ্য পেলে এর সঙ্গে ক্যানভাস শ‌ু পরা যায়। আবার বৃষ্টির দিনে যাঁদের বাইরে কাজ করতে হয়, তাঁদের লেদারের জুতার বদলে রেক্সিনের জুতা বেছে নেওয়া ভালো। এমনটাই জানালেন শাহিনা রাব্বি তপতী।
শাহিনা রাব্বির কাছ জেনে নেওয়া যাক জুতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়—
* পায়ের আকৃতি ছোট হলে সরু হিলের জুতা পরা যেতে পারে। তবে এ ধরনের জুতায় অভ্যস্ত হওয়াটাও জরুরি।
* পা একটু চওড়া হলে পায়ের সামনের দিক ঢাকা এমন জুতা পরতে পারেন।
* যাঁদের উচ্চতা বেশি, তাঁরা চাইলে উঁচু জুতা পরতে পারেন। তবে অতিরিক্ত উঁচু জুতা বাছাই না করাই ভালো। ব্যালেরিনা শ‌ু তাঁদের জন্য মানানসই।
* ওয়েজেস হিল জুতা পরতে পারেন যে কেউই। তবে এ ক্ষেত্রেও নিজের উচ্চতা অনুযায়ী হিলের উচ্চতা বেছে নেওয়াই ভালো।
* ত্রিভুজ আকৃতির শারীরিক গঠন যাঁদের, তাঁদের জন্য ওয়েজেস হিল, হাই কোন হিল, স্টারডি পয়েন্টি হিল মানানসই।
* আপেলের আকৃতির শারীরিক গঠন যাঁদের, ওয়েজেস হিল অথবা হাই কোন হিল তাঁদের পায়ের সৌন্দর্য বাড়াবে।
* উল্টানো ত্রিভুজ আকৃতির গঠন যাঁদের তাঁরা উজ্জ্বল রঙের পাম্প শ‌ু পরতে পারেন।
* আওয়ার গ্লাস (বালুঘড়ি) শারীরিক গঠনের অধিকারীরা হিল পরতে পারেন। এ ছাড়া ব্যালেরিনাও মানাবে। জুতার সামনের অংশটা গোল হলে ভালো।
যাঁদের শারীরিক গঠন চারকোনা, তাঁরা ব্লক হিল আর কোন হিলের জুতা পরতে পারেন। 

No comments:

Post a Comment